ভবঘুরের মৃত্যু দুর্গাপুরে


এক ভবঘুরে যার ঠিকানা ছিল দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল. আবার কখনো কখনো শহরের অভিজাত এলাকা বিধাননগরের নানা প্রান্তে দেখা যেত.এইঐদিক ঘুরে যেটুকু পেত তাই দিয়ে দুই বেলা পেট ভরাতো সে. কিন্তু জীবন যুদ্ধের এই কঠিন  সংগ্রামে শেষ পর্যন্ত হেরে বসলো এই ভবঘুরে. দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের কাছে দুর্গাপুর স্টেশনগামী বাস প্রতীক্ষালয়েই কঠিন এই সংগ্রামের শেষ যবনিকা পড়লো এই ভবঘুরে বৃদ্ধ মানুষটার. আর অমানবিকতার শুরুটা ঠিক এখান থেকেই ঝা চকচকে প্রতীক্ষালয়, আবার এই শহরের অভিজাত এলাকা বলে পরিচিত বিধাননগর, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এই সুন্দর মার্বেল টাইলসের মধ্যে পড়ে থাকা বৃদ্ধর নিথর দেহ পড়ে থাকলেও কেউ দেখার সময়টুকু পায়নি, হয়তো একটু চিকিৎসার সুযোগ পেলে বেঁচে থাকার আনন্দটা পেতে পারতো এই ভবঘুরে বৃদ্ধ, কিন্তু সরকারী হাসপাতালের ঢিল ছোড়া দূরত্বে বৃদ্ধ পড়ে রইলেও কেউ তাকে হাসপাতাল পৌঁছে দেওয়ার মানবিকতাটুকু দেখাতে পারেনি. ডক্টর বিধানচন্দ্র রায়ের স্বপ্নের শহর যে একটু একটু করে এক অমানবিকতার পথে এগিয়ে যাচ্ছে তা বোঝা গেল এইদিন. বৃদ্ধ ভবঘুরের মৃতদেহ দিয়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লেও সেই গন্ধ পৌঁছোয়নি এই শহরের মানবিকতার অন্দরে. আক্ষেপের জায়গাটা এখানে. করোনা সংক্রমনের ভয়ে আমরা ভীত, বলছি সামাজিক দূরত্বের কথা,পড়ছি মুখে মাস্ক, কিন্তু করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর বিষ আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি,ভুলে গেছি মানবিকতার সংজ্ঞা. আর যেটা মারণ ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলের চেয়েও মারাত্মক, জানা নেই এই বিষাক্ত ছোবলের দংশন থেকে আদপে মুক্তি মিলবে কিনা. আজ এই ভবঘুরে বৃদ্ধর নিথর দেহ যেন বলে দিয়ে গেল যে সামাজিক দূরত্বের বিধি করে সরকার করোনার ভয়াবহ ছোবল থেকে সাধারণ মানুষকে   রক্ষা করার কথা বলছে, সেই দূরত্ব টা অনেক আগে থেকেই  আমাদের মনের অন্দরে তৈরী হয়ে গেছে,তাইতো সরকারী হাসপাতালের ঢিল ছোড়া দূরত্বে ঝা চকচকে শহরের সুন্দর টাইলস মার্বেলের মেঝেতে এক ভবঘুরের নিথর দেহ পড়ে রইলেও ব্যাস্ত শহরের কেউ তা দেখার সময়টুকু পায়নি. আবার এই শহরে  আগামীকালের সূর্যোদয় রাজনীতির কৌশল আর পাল্টা কৌশলে মেতে উঠবে, আবার নুতন কোনো খবরের সন্ধানে আমরা বেরোব, ধরবো কলম,হবে চুল চেরা বিশ্লেষণ, দাবী করবো এক্সক্লুসিভ রিপোর্টের, কিন্তু এত ভিড়ের মাঝে কখন যে হারিয়ে গেছে মানবিকতার সংজ্ঞা সেটা আর বুঝতে পারলাম না আমরা.এবার বলি, শেষ পর্যন্ত  এই বৃদ্ধর নিথর দেহের শেষ ঠিকানা হল সরকারী লাশঘরে, আর জীবন যুদ্ধে কঠিন লড়াইয়ে হেরে যাওয়া এই মানুষটা যেন বলে দিয়ে গেল, করোনার  মারণ ভাইরাসের  চেয়েও আরো মারাত্মক বিষ প্রতিনিয়ত বয়ে বেড়াচ্ছে এই সমাজ, যার থেকে মুক্তি কোন পথে জানা নেই কারোর.

Comments

Popular posts from this blog

পাহাড়কে দূষণ মুক্ত করার ডাক দিয়ে দুর্গাপুর থেকে সাইকেল করে শুশুনিয়া পাহাড় পাড়ি তরুণ ব্রিগেডের।

দুর্গাপুরের মহকুমা শাসকের হাত ধরে শহরের বুকে যাত্রা শুরু এম পিক্স.কমের.

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লরিকে পেছন থেকে ধাক্কা মারল ছোটো মালবাহী গাড়ি. দুর্গাপুরে এই পথ দুর্ঘটনায় মৃত এক.